যাকাতঃ
যাকাত আরবি শব্দ । যার অর্থ “যা পরিশুদ্ধ করে”প্রত্যেক স্বাধীন, পুর্ণ বয়স্ক মুসলিম নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে, গরীব-দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয় তবে তাকে যাকাত বলে। পবিত্র আল কুরআনে যাকাত শব্দটির উল্লেখ এসেছে ৩২ বার।
যাকাত ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম ১টি স্তম্ভ। নেসাব পরিমান মালের বা সম্পত্তির মালিক হলেই প্রত্যেক নর-নারী মুসলিমের উপর তা পরিশোধ করা ফরজ করা হয়েছে। বর্তমানে জ্ঞানগত দূর্বলতার কারণে যাকাতকে অন্যান্য দান খয়রাতের সাথে একীভূত করা হয়। যা অত্যান্ত দুঃখ ও বেদনাজনক। সালাত ও সাওম যেমন ফরজ তেমনি যাকাতকেও ফরজ করা হয়েছে। সুতরাং যাকাত পরিশোধ ও দান খয়রাতকে একীভূত করার কোন সুযোগ নেই। যাকাত যদি কেউ সঠিক ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিশোধ না করেন তার উপর ফরজ দায়িত্ব পালন না করার গুনাহ অর্পিত হবে। যাকাত হিসাব করাটাও ফরজ। হিসাব ছাড়া যদি কেউ লক্ষ লক্ষ টাকা দান করেন তবে তা যাকাত আদায় হবে না। আর যদি হিসাব করে যথাযথভাবে যাকাত আদায় করা হয় তবে তা আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য।
যাকাতের শর্ত সমূহ
স্বাধীন, পুর্ণ বয়স্ক মুসলিম নর-নারীর কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে কতিপয় শর্তসাপেক্ষে উহা আদায় করা ফরজ।১। সম্পদের উপর পূর্ণ মালিকানা ঃ
সম্পদের উপর যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য সম্পদের মালিকানা সুনির্দিষ্ট হওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ সম্পদ মালিকের অধিকারে থাকা, সম্পদের উপর কারো অধিকার না থাকা এবং ইচ্ছেমতো সম্পদ ভোগ ও দখলের পুর্ণ অধিকার থাকা। যে সকল সম্পদের কোন সু-ষ্পষ্ট মালিকানা নেই, সে সকল সম্পদের কোন যাকাত নেই। যেমন-সরকারি সম্পত্তি। অনুরূপভাবে জনকল্যান মূলক কাজের জন্য দান করা ওয়াকফকৃত সম্পদেরও কোন যাকাত নেই। তবে ওয়াকফ যদি কোন ব্যক্তি বা গোত্রের জন্য হয় তবে তার উপর যাকাত দিতে হবে।২। সম্পদ উৎপাদনক্ষম হওয়াঃ
যাকাতের জন্য সম্পদকে অবশ্যই উৎপাদনক্ষমম, প্রবৃদ্ধিশীল হতে হবে অর্থাৎ সম্পদ বৃদ্ধির পাবার যোগ্যতাই যথেষ্ট। যেমন; গরু, মহিষ, ব্যবসায়ের মাল, নগদ অর্থ ব্যবসায়ের কাজে যন্ত্রপাতি ই্ত্যাদি মালামাল বর্ধণশীল। অর্থাৎ যে সকল মালামাল নিজের প্রবৃদ্ধি সাধনে সক্ষম নয় সে সবের উপর যাকাত ধার্য্য হবে না। যেমন; ব্যক্তিগত ব্যবহারের মালামাল বা চলাচলের বাহন ইত্যাদি।
৩।নিসাব পরিমাণ সম্পদ ঃ
যাকাত ফরজ হওয়ার ৩য় শর্ত হচ্ছে শরীয়ত নির্ধারিত সীমাতিরিক্ত সম্পদ থাকা।সাধারণত ৫২.৫ তোলা রূপা বা ৭.৫ তোলা স্বর্ণ বা উভয়ই মিলে ৫২.৫ তোলা রূপার সমমূল্যে সম্পদ থাকলে সে সম্পদের যাকাত দিতে হবে। পশুর ক্ষেত্রে এ নিয়ম ভিন্ন।
৪। মৌলিক প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ থাকাঃ
সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মিটিয়ে যে সম্পদ উদ্ধৃত থাকবে, শুধু মাত্র তারই উপর যাকাত ফরজ হবে। এ ব্যাপারে আল কোরআনে বলা হয়েছে ঃ লোকজন আপনার নিকট (মুহাম্মদ সঃ) এর নিটক জানতে চায়, তারা আল্লাহর পথে কি ব্যয় করবে? বলুন যা প্রয়োজনের অতিরিক্ত। আল্লাহ এভাবেই সুষ্পষ্ট বিধান বলে দেন।
৫। ঋণমুক্ত থাকা ঃ
নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলেও ব্যক্তির ঋনমুক্ত, যাকাত ওয়াজিব হওয়ার অন্যতম শর্ত। যদি সম্পদের মালিক এত পরিমাণে ঋনগ্রস্থ হন, যা নিসাব পরিমাণ সম্পদ মিটাতে অক্ষম বা নিসাব পরিমান সম্পদ তার চেয়েও কম, তবে তার উপর যাকাত ফরজ হবে না। ঋন পরিশোধের পর নিসাব পরিমান সম্পদ থাকলেই যাকাত ফরজ হবে।
৬। সম্পদ এক বছর আয়ত্তাধীন থাকাঃ
নিসাব পরিমাণ স্বীয় সম্পদ একবছর নিজ আয়ত্তাধীন থাকা যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পূর্বশর্ত। তবে কৃষিজাত ফসল, খনিজ সম্পদ ইত্যাদির যাকাত (উশর) প্রতিবার ফসল তোলার সময়ই দিতে হবে। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ও কোম্পানীর ক্ষেত্রে বছর শেষে উদ্বর্তেপত্রে বর্ণিত সম্পদ ও দায়-দেনা অনুসারে যাকাতের পরিমাণ নির্ধারিত হবে।
যাকাত বন্টনের খাতসমূহঃ
পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে যাকাত বন্টনে আটটি খাত আল্লাহ তায়াল নির্ধারণ করেছেন। এই খাতগুলো সরাসরি কুরআান দ্বারা নির্ধারিত। যেহেতু আল্লাহর নির্দেশ , তাই এই বাইরে যাকাত বন্টন করলে, তা শরীয়তসম্মত হবে না।১। ফকির (যার কিছু নাই)
২। মিসমিন (যার নিসাব পরিমাণ সম্পদ নাই)
৩। যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী (যার অন্য কোন জীবিকা নাই)
৪। নওমুসলিমদের (আর্থিক সংকট থাকলে)
৫। কৃতদাস (মুক্তির উদ্দেশ্যে)
৬। ধনী সম্পদশালী ব্যক্তি যার সম্পদের তুলনায় ঋন বেশি
৭। (স্বদেশে ধনী হলেও বিদেশে) আল্লাহর পথে জিহাদরত ব্যক্তি
৮। মুসাফির (যিনি ভ্রমনকালে অভাবে পতিত)
যাকাতবিষয়ক কিছু জরুরী জ্ঞাতব্য:
১.যাকাতের ক্ষেত্রে নিয়ত করা (যাকাত দিচ্ছি এই জ্ঞান করা) আবশ্যক। সেটা প্রদান করার সময়ও হতে পারে বা যাকাতের সম্পদ হিসাব করে পৃথক করার সময়ও হতে পারে।২.প্রতিটা সম্পদের উপর এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া জরুরী নয়। বরং, বছরের মাঝে যে সম্পদ অর্জিত হবে, তাতেও যাকাত আসবে।
৩.যাকাত আদায়ের তারিখে যে যে সম্পদ থাকবে, সে সে সম্পদের যাকাত আদায় করবে।
৪.যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণে মনগড়া/অনুমাননির্ভর হিসাব করবে না। বরং পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে যাকাত আদায় করবে। যেন কোনো ক্রমেই পরিমাণের চেয়ে কম আদায় না হয়।
৫.যাকাত যেদিন হিসাব করে পৃথক করবে, সেদিনের মূল্য ধর্তব্য হবে।
৬.চন্দ্র মাস হিসাব করে যাকাত দিবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিবছর রমজানের বা মুহাররমের এক তারিখ যাকাত আদায় করবে।
আল্লাহ আমাদের সকলকে তাঁর বিধান মেনে চলার তাওফীক দিন। আমীন।
যাকাতের আলোচ্য বিষয়টি অনেক দীর্ঘ তাই অতি সংক্ষিপ্ত আকারে তুরে ধরলাম। ভুল থাকলে দয়া করে কমেন্টে জানাবেন সংশোধন করা হবে।
উৎস ঃ উইকিপিডিয়া
0 মন্তব্যসমূহ